সৌম্যদীপ রায়

 

আলো বিষয়ক টিকাগুচ্ছ


আলো নিয়ে প্রথম পড়াশুনো করার
অনেক আগেই আমি আলো বিষয়ক অনেক কিছুই জানতাম।
ঠিক যেমন সদ্যোজাতর প্রথম কান্নায় একটা ‘মা’ ডাক লুকিয়ে থাকে,
ঠিক সেভাবেই আলোর কোনো সমীকরণ না জেনেই
আমি জন্ম থেকেই দেখতে পারতাম

কখন সকাল হচ্ছে, কখন সন্ধ্যা  ঘনিয়ে আসছে আর

কখন আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে

একটু চুলের বিন্যাস ঠিক করে নেওয়া দরকার।

আলো এক ধরনের শক্তি মেনে নিলেও
সেই বিষক্রিয়া যে আমার চোখে প্রবেশ করলেই
আমি সব কিছু দেখতে পারবো তার কোনো মানে নেই।
আলো একটা বস্তুকে দৃশ্যমান করে তোলে ঠিকই
কিন্তু সেই বস্তুটি সাত রঙের মধ্যে কোন রঙ শুষে নিচ্ছে
সেটা জেনে নিতে হলে, তার বর্তমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান খোঁজ নিয়ে জেনে নেওয়া ভালো।

এই সতর্কীকরণের একটাই কারণ সেটা না জানা থাকলে সেই আ-লৌকিক শক্তির কাছে হার মেনে সারাজীবন একটা সাদা ঘোলাটে রঙ চোখে আসতে বাধ্য।

আমরা আলো দেখতে পাইনা।
আমরা আসলে আলোকিত বস্তুটাকেই শুধু দেখতে পাই

আর খুশি থাকার চেষ্টা করতে থাকি অনবরত।
আলো না থাকলে দুঃখপ্রকাশ করি, হা-হুতাশ করি, ডেকে উঠি
“অন্ধকার” “অন্ধকার”।
আমরা আসলে এক বিধবার মতই বেঁচে আছি।
ফুলের মালা থেকে আলোকিত হওয়া

ছেলের বা মেয়ের মুখ দেখেই অনেকে আলোকে অনুভব করে।

 

আলো এক ধরনের তরঙ্গ।
অনেকে তরঙ্গ বোঝাতে এক বালতি জলের মধ্যে একফোঁটা  জল ফেলে

ঢেউ-এর উদাহরণ দিয়ে থাকে।
আমি তাদের জিজ্ঞাস করিনি সমুদ্রের ঢেউএর সঙ্গে এটার পার্থক্য কী।

আমি জানি সমদ্রের ঢেউএর সঙ্গে চাঁদের একটা সম্পর্ক আছে।
আমি নিজে সেটা জানলেও অনেকেই সেটা জানেনা,

তাই জীবনে নিজের চোখে দেখতে শেখার সঙ্গে বাবা-মায়ের সম্পর্ক অনেকেই মেনে নেয়না।

 

 

আলোর গতিবেগ মাধ্যমের ঘনত্বের ব্যস্তানুপাতিক।

আবার এটাও জানা গিয়েছে শূন্য মাধ্যমে আলোর গতিবেগ সব চেয়ে বেশি।

এটা মেনে নেওয়ার পর থেকেই

আমি সকাল সকাল উঠে বাড়ির ছাদে পৌঁছে

আকাশের শূন্যতায় চিৎকার করে বলি “আমি খুব ভালো আছি”,

আর এরকম করে আমি সত্যি খুব ভালো থাকি।

আমার সেই ভালো থাকায় অন্য কোনো মানুষের মন-মেজাজের ঘনত্বের প্রভাব পড়েনা।

 

সাদা আলো সাতটি রঙের মিশ্রণ আর

প্রিজম ব্যবহার করলে সাদা আলোকে

সেই সাত বিভিন্ন রঙে আলাদা করা যায়।

 

ঠিক এভাবেই সপ্তাহের সাত দিনে আমি কী কী করলাম

বা কী করতে পারলে কী ভালো হত

যখন বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি

বুঝতে পারি চাওয়া পাওয়ার হিসেব করা একদমই অনুচিত।

 

এই জন্যই আমি বাড়িতে একটাও প্রিজম রাখিনি।

 

আলোর বৈশিষ্ট হচ্ছে প্রতিফলন।

ঠিক যেমন আমি নিজের মনে, নিজের মত চিন্তা করতে করতে কিছু একটা নির্নয় করলাম আর সেটা অন্য ব্যক্তিকে বললাম, যে ব্যক্তিটির নিজেরও একটা ভাবনা-চিন্তা আছে, নিজের জগত আছে, সে একশ শতাংশ আমার কথা মেনে নেবে না।

আমি আর সেই ব্যক্তিটি আসলে দুজন দুটো মাধ্যম আর আমাদের মত বিনিময় একটা বিভেদতল।

আমার নিজস্ব যতটুকু প্রকাশিত ভাবনা সে ব্যক্তিটির মুখের না-মেনে-নেওয়া ভাব ভঙ্গী থেকে ঠিকরে ফিরে আসবে সেই ঘটনাকেই আমি প্রতিফলন না দিয়েছি।

 

৭ নম্বর উদাহরণেই যদি ধরে নিই অপর মানুষটি নিজস্ব কিছু সঙ্কটের মুহূর্ত দিয়ে যাচ্ছেন, আর সেই সন্ধিক্ষণে আমি কিছু আলোর রশ্মি ফেললাম দুজনের বিভিন্ন মানসিক ঘনত্বের বিভেদতলে , তাহলে কিছুটা হলেও অল্প কিছু কথা তার ভালো লাগবে আর পৌঁছে যাবে সেই মানুষটির মনের গহ্বরে। আমার বলে দেওয়া ভালোবাসার কথা অল্প হলেও দিক পরিবর্তন করতে বাধ্য দুজনেরই। এই অনুভূতিটাকেই আমরা আলোর প্রতিসরণ বা নতুন ভাবে ভালোবাসায় নিজেকে বদলে নেওয়ার সঙ্গে তুলনা করতে পারি।

 

প্রতিসরনের সূত্রে দুটো মানুষের কথা বারবার ওঠে।

মূলত সেই দুটো মানুষের মানসিক ও শারীরিক ঘনত্বের পার্থক্যের জন্যই সমাজ এই বিশেষ সূত্রটির উল্লেখ করেছে। প্রথম ব্যক্তি যে কথাগুলো বলে তাকে আপতিত ভাবনা ও অপর ব্যক্তি কিভাবে ও কতটা সেই কথাগুলো মেনে নেয় তাকে প্রতিসৃত ভাবনা বললে, আমার এটা বুলে গেলে চলবে না যে আপাতন কোণ ও প্রতিসরণ কোণের উপর ভালবাসার দীর্ঘস্থায়ীত্বতা নির্ভর করবে।

 

১০

আপনি যখন মন খারাপের রাজত্বে নিজেকে রাজা ভাবছেন আর আপনার ভাবনা চিন্তার ঘনত্ব আপনার মনের মধ্যে বাসা বেঁধে দিন দিন সুন্দরবনের ঘন ম্যানগ্রোভের মত দানা বাঁধছে, ঠিক সেই মুহূর্তে আপনার চিন্তাধারার তরঙ্গ থেকে যে আলোকরশ্মি পারিপার্শ্বিক আধুনিক সমাজের কোনো নির্জিবের উপর আপতিত হল তখন অনেক কিছুই হতে পারে। সেই অপর মানুষটির নিজের মানসিক সঙ্কট কোণের থেকে অনেক বেশি হয়ে আপতিত হলে আপনার ভাবনা চিন্তা পুনরায় আপনার কাছেই ফিরে আসবে। তখন আপনার নিজের বদলে যাওয়া অবস্থানের ঠিকানা পূর্ণ আভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের সূত্রে পাওয়া যাবে।